EXPLAINED

Classical languages: 'ধ্রুপদি ভাষা'র স্বীকৃতি, কেন দেওয়া হল বাংলাকে?

Follow Us Vidyasagar-Barna Parichay: বাংলা বর্ণের সঙ্গে বাঙালিকে পরিচিত করিয়েছে বর্ণপরিচয়। (ছবি- টুইটার) Classical languages: ভারতের আরও পাঁচটি ভাষা ধ্রুপদি ভাষার মর্যাদা পেয়েছে। তার মধ্যে বাংলাও আছে। বিভিন্ন রাজ্যের দাবির প্রেক্ষিতে, ইউপিএ-১ সরকার ভারতীয় ভাষায় 'ধ্রুপদি ভাষা' নামে এক বিভাগ তৈরির সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। এই মর্যাদা পাওয়ার জন্য মানদণ্ডও নির্ধারণ করেছিল। বৃহস্পতিবার কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভা মারাঠি, পালি, প্রাকৃত, অসমিয়া এবং বাংলাকে 'ধ্রুপদি ভাষা'র মর্যাদা দিয়েছে। এর আগেই তামিল, সংস্কৃত, তেলেগু, কন্নড়, মালয়ালম এবং ওড়িয়াকে ধ্রুপদি ভাষার মর্যাদা দিয়েছিল কেন্দ্র। ২০০৪ সালের ১২ অক্টোবর প্রথম ভারতীয় ভাষা হিসেবে তামিল 'ধ্রুপদি ভাষা'র মর্যাদা লাভ করেছিল। প্রাচীনত্ব এবং সমৃদ্ধ সাহিত্যের কারণেই তামিল ওই মর্যাদা পায়। ওই কমিটিকে বিভিন্ন রাজ্য এবং সংস্থার 'ধ্রুপদি ভাষা'র মর্যাদা চেয়ে আবেদনগুলো, বিবেচনার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল। ২০০৪ সালের ২৫ নভেম্বর, সংস্কৃতকে 'ধ্রুপদি ভাষা'র মর্যাদা দেওয়া হয়। এরপর তেলুগু (২০০৮), কন্নড় (২০০৮), মালায়ালাম (২০১৩) এবং ওডিয়া (২০১৪) ভাষাকে 'ধ্রুপদি ভাষা'র মর্যাদা দেওয়া হয়। 'ধ্রুপদি ভাষা'র সর্বশেষ মানদণ্ড কী? এই বছরের ২৫ জুলাই, ভাষা বিশেষজ্ঞ কমিটি (এলইসি) সর্বসম্মতিক্রমে ক্লাসিক্যাল স্ট্যাটাসের বা 'ধ্রুপদি ভাষা'র মানদণ্ড সংশোধন করেছে। মানদণ্ডগুলো হল: ক) ভাষাগুলোর ১,৫০০-২,০০০ বছরের ইতিহাস থাকতে হবে। খ) প্রাচীন সাহিত্যের ধারা সেই ভাষায় থাকতে হবে। গ) ওই সব ভাষায় লেখালেখির ঐতিহাসিক, শিলালিপিগত প্রমাণ থাকতে হবে। ঘ) সেই ভাষায় অতীতে কবিতা ছাড়াও গদ্যে জ্ঞানসমৃদ্ধ লেখালেখি থাকতে হবে। ঙ) ধ্রুপদি ভাষার সঙ্গে তার বর্তমানের ধারার মিল থাকতে হবে। এর পরে, কমিটি পাঁচটি নতুন ধ্রুপদি ভাষা তালিকায় যোগ করার সুপারিশ করেছিল। যার প্রস্তাব কয়েক বছর ধরেই কেন্দ্রের কাছে পড়েছিল। বৃহস্পতিবার সেগুলোতেই অনুমোদন দিয়েছে কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভা । মারাঠি: বিধানসভা নির্বাচনের মাত্র কয়েক সপ্তাহ আগেই মারাঠিকে 'ধ্রুপদি ভাষা'র স্বীকৃতি দেওয়া হল। এক দশকেরও বেশি সময় ধরে এই প্রস্তাব গ্রাহ্য হয়নি। মহারাষ্ট্র সরকার ২০১৩ সালে আবেদন করেছিল। আধুনিক মারাঠি প্রাকৃত ভাষা থেকে এসেছে। পশ্চিম ভারতে ব্যবহৃত প্রাকৃত ছিল সাতবাহনদের সরকারি ভাষা। কিছু মারাঠি পণ্ডিত দাবি করেছেন যে প্রাকৃত ভাষার মধ্যে মারাঠিই প্রথম বিভক্ত হয়ে আলাদা স্থান অর্জন করেছিল। যদিও সেই দাবি নিয়ে মতানৈক্য আছে। তবে, মহারাষ্ট্রী প্রাকৃতের প্রাচীনত্বের প্রমাণ পাওয়া যায় পুনে জেলার একটি পাথরের শিলালিপিতে, যা খ্রিস্টপূর্ব ১ম শতাব্দীর। আরও আধুনিক মারাঠির প্রাচীনতম প্রমাণ সাতারায় পাওয়া একটি তাম্রলিপিতে পাওয়া যায়। ওই লিপি ৭৩৯ খ্রিস্টাব্দের। বাংলা ও অসমিয়া: পশ্চিমবঙ্গ এবং অসাম রাজ্যের সরকারগুলোও তাদের নিজ নিজ ভাষার জন্য 'ধ্রুপদি' ভাষার মর্যাদা চেয়েছিল। এই উভয় ভাষারই উৎপত্তি 'মাগধী প্রাকৃত' থেকে। এই 'মাগধী প্রাকৃত' পূর্ব ভারতে জনপ্রিয় প্রাকৃতের একটি রূপ। যা ছিল, মগধের শাসকদের আমলের সরকারি ভাষা। ঠিক কোন তারিখে এই ভাষাগুলো তৈরি হয়েছিল, তা নিয়ে নানা মত আছে। পণ্ডিতরা বলছেন, ৬ষ্ঠ থেকে দ্বাদশ শতকের মধ্যে এই ভাষাগুলোর উৎপত্তি হয়েছিল। কিংবদন্তি ভাষাবিদ সুনীতি কুমার চট্টোপাধ্যায়ের ধারণা ছিল, ইন্দো-আর্য স্থানীয় ভাষা সম্ভবত বাংলার আগে অসমেই চালু হয়েছিল। আরও পড়ুন- লেবাননে ইজরায়েলি হামলা, ভয়ে কাঁপছে সেনা-প্রধানমন্ত্রী প্রাকৃত ও পালি: পণ্ডিতদের মতে, কোনও একক ভাষাকে প্রাকৃত ভাষা বলা হত না। ভাষাবিদরা প্রাকৃত শব্দটি ঘনিষ্ঠভাবে সম্পর্কিত ইন্দো-আর্য ভাষাগুলোর একটি গোষ্ঠী কে বোঝাতেন। যাদের সম্পর্কে বলা হত যে ওই ভাষাগুলো সংস্কৃতের বদলে জনসাধারণ ব্যবহার করতেন। আর, সংস্কৃত স্রেফ অভিজাত এবং উচ্চস্তরের সাহিত্যের মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল। ইতিহাসবিদ এএল বাশাম তাঁর 'দ্য ওয়ান্ডার দ্যাট ইজ ইন্ডিয়া (১৯৫৪)' এ লিখেছেন: 'বুদ্ধের সময় জনগণ এমন ভাষায় কথা বলতেন, যা সংস্কৃতের চেয়ে অনেক সহজ ছিল। এগুলোই ছিল প্রাকৃত। যার মধ্যে বেশ কয়েকটি উপভাষা বলে প্রমাণিত হয়েছে।' এই ভাষাগুলোকে 'ধ্রুপদি ভাষা'র স্বীকৃতি দেওয়ায় লাভটা কী হবে? 'ধ্রুপদি ভাষা'র স্বীকৃতি পাওয়ায় এই ভাষাগুলোর সাংস্কৃতিক এবং শিক্ষাগত প্রভাব জাতীয় এবং আন্তর্জাতিকভাবে প্রসারিত হবে। শিক্ষা মন্ত্রক সেই উদ্যোগ নেবে। যেমন, সংস্কৃতের প্রচারের জন্য ২০২০ সালে তিনটি কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। প্রাচীন তামিল গ্রন্থের অনুবাদের সুবিধার জন্য এবং তামিল ভাষায় কোর্স করার জন্য ২০০৮ সালে সেন্ট্রাল ইনস্টিটিউট অফ ক্লাসিক্যাল তামিল প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। কন্নড়, তেলেগু, মালয়ালম এবং ওড়িয়া অধ্যয়নের জন্যও একইরকম 'উৎকর্ষ কেন্দ্র' তৈরি করা হয়েছে। সংস্কৃতি মন্ত্রক, (বিভিন্ন একাডেমির মাধ্যমে) শিক্ষা মন্ত্রক এবং সংশ্লিষ্ট রাজ্য সরকারগুলো এইসব ভাষায় আরও বেশি জ্ঞান-আদান-প্রদান এবং গবেষণা করার ব্যবস্থা করবে। এছাড়াও, পণ্ডিতদের সুবিধার জন্য এই সব ভাষায় পাণ্ডুলিপিগুলো ডিজিটালাইজড করা হবে বলে সংস্কৃতি মন্ত্রকের আধিকারিকরা জানিয়েছেন। None

About Us

Get our latest news in multiple languages with just one click. We are using highly optimized algorithms to bring you hoax-free news from various sources in India.